Abar Asibo Phire Poem Summary in Bengali

By Amit Kumar

Published on:

Abar Asibo Phire Poem Summary in Bengali
- Advertisement -

Abar Asibo Phire Poem Summary in Bengali

আবার আসিব ফিরে কবিতার মূলভাব

বাংলার বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি হাজার হাজার মানুষের মন ভরে দেয়। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অন্য যে কোন দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে আলাদা। নদীমাতৃক বাংলাদেশের দুই পাশে শস্যক্ষেত্র, বাতাসে পাকা ধানের গন্ধ, শীতের কুয়াশা, শিমুলের ডালে বসে লক্ষ্মীপেঞ্চা, উঠোনের ঘাসে ধান ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিশুরা, কিশোররা নদীর কর্দমাক্ত পালের মধ্যে সাঁতার কাটছে প্রকৃতি এগুলোই বাংলার মানুষের মন ভরিয়ে দেয়।

- Advertisement -

কবি জীবনানন্দ দাশ তার প্রিয় জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করতে পারেন না। প্রিয় মাতৃভূমির সবুজ প্রকৃতি সব সময় কবির মনকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। তাই কবি তাঁর প্রিয় ধনসিন্দ্রীর তীরে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন মৃত্যুর পরেও। কবির কাছে বাংলাদেশ সব দেশের সেরা। তাই কবি বাংলাদেশে ফিরে আসার আশা প্রকাশ করেছেন।

কবি জীবনানন্দ দাশ তার জন্মভূমি বাংলাদেশকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। এই কারণে, তার স্বদেশের সবকিছু তার কাছে আশ্চর্যজনকভাবে সুন্দর হয়ে উঠেছে। তিনি তাঁর মৃত্যুর পরও বিভিন্ন ছদ্মবেশে বাংলার প্রকৃতিতে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন কারণ তিনি তাঁর জন্মভূমিকে ভালোবাসতেন। কখনও সে মূর্তির ছদ্মবেশে ফিরে আসতে চায়, কখনও সকালে কাকের মতো।

যে কোনো মূল্যে বাংলার মাটিতে ফিরতে হবে, এটাই কবির ইচ্ছা। কারণ, বাংলার সৌন্দর্য কবিকে যতটা মুগ্ধ করেছে, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের সৌন্দর্য তা করতে পারেনি। উদ্দীপকের মামুনের ক্ষেত্রেও একই কাজ হয়েছে। তাই তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। তাই আমরা বলতে পারি, একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক তার দেশকে ভুলতে পারে না।

- Advertisement -


আবার আসিব ফিরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর:

অনুশীলনীর প্ৰশ্নোত্তরঃ

১। টীকা লেখ : 

( ক ) জীবনানন্দ দাশ ।

- Advertisement -

উত্তরঃ কবি পরিচিতি দেখ । 

( খ ) জলঙ্গী ।

উত্তরঃ জলঙ্গী নদী পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা ও নদীয়া জেলা দিয়ে প্রবাহিত । অতীতে এর নাম ছিল খড়ে নদী । নদীটি মুর্শিদাবাদে পদ্মানদী থেকে উৎপন্ন হয়ে নদীয়া জেলার পলাশীপাড়া , তেহট্ট , কৃষ্ণনগরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মায়াপুরের কাছে ভাগীরথীর সাথে মিলিত হয়েছে । এই মিলিত প্রবাহ হুগলী নদী নামে পরিচিত । নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ১১০ কি.মি. – র কাছাকাছি । 

( গ ) ধানসিড়ি ।

উত্তরঃ আসামের গোলাঘাট জেলা এবং নাগাল্যান্ড – ডিমাপুর জেলার প্রধান নদী । ধানসিড়ি নদীর উৎসস্থল নাগাল্যান্ডের লাইসাং পর্বত , ব্রহ্মপুত্র নদীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পূর্বে নদীটি দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে ৩৫২ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে । ধানসিড়ি নদীটি ১২১০ স্কোয়ার কি.মি. জুড়ে প্রবাহিত। এই নদীটির একপারে রয়েছে ধানসিড়ি রিজার্ভ ফরেস্ট অপরপারে রয়েছে ইনটঙ্কি ন্যাশানাল পার্ক । 

ক্রিয়াকলাপ 

২। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও– 

( ক ) ‘ আবার আসিব ফিরে ‘ কবিতাটির কবি কে ?

উত্তরঃ ‘ আবার আসিব ফিরে ‘ কবিতাটির কবি জীবনানন্দ দাশ । 

( খ ) কবিতাটি কোন কাব্যের অন্তর্গত ? 

উত্তরঃ ‘ আবার আসিব ফিরে ’ কবিতাটি “ রূপসী বাংলা ” কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত । 

( গ ) কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত প্রধান কাব্যগ্রন্থটির নাম কী ? 

উত্তরঃ কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত প্রধান কাব্যগ্রন্থটির নাম “ বনলতা সেন ” । 

( ঘ ) কবি জীবনানন্দ দাশ কর্মজীবনে কী করতেন ? 

উত্তরঃ কবি জীবনানন্দ দাশ কর্মজীবনে ইংরাজী সাহিত্যের অধ্যাপনা করতেন । 

( ঙ ) আবার আসিব ফিরে ‘ কবিতাটিতে কবি কোথায় ফিরে আসতে চেয়েছেন ? 

উত্তরঃ ‘ আবার আসিব ফিরে ‘ কবিতাটিতে কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর জন্মভূমি বাংলাদেশেই ফিরে আসতে চেয়েছেন । 

( চ ) কবি মৃত্যুর পর কীভাবে জন্মভূমিতে ফিরে আসতে চান ? 

উত্তরঃ কবি মৃত্যুর পর শঙ্খচিল , কাক হাঁস , সুদর্শন পাখি , সাদা বক অথবা লক্ষ্মীপেঁচার বেশে পুনরায় জন্মভূমিতে ফিরে আসতে চান । 

( ছ ) কবিটিতে কোন নদীর কথা বলা হয়েছে ? 

উত্তরঃ কবিতাটিতে জলঙ্গী নদীর কথা বলা হয়েছে । 

( জ ) কবি কোন জন্মে পায়ে ঘুঙুর থাকবে বলে বলেছেন ? 

উত্তরঃ কবি বলেছেন তিনি যখন হাঁস হয়ে জন্ম নেবেন তখন তাঁর পায়ে ঘুঙুর থাকবে । 

( ঝ ) লক্ষ্মীপেঁচা কোন গাছের ডালে ডাকে ? 

উত্তরঃ লক্ষ্মীপেঁচা শিমূল গাছের ডালে ডাকে । 

( ঞ ) কবি কিভাবে কাঁঠাল ছায়ায় আসবেন বলে আশা করেন ? 

উত্তরঃ কবি যখন ভোরের কাক হয়ে জন্মাবেন তখন কুয়াশার বুকে কাঁঠাল ছায়ায় আসবেন বলে আশা করেন ।

২। সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও : 

( ক ) ‘ কবি জীবনানন্দ দাশ ’ রচিত চারটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো । 

উত্তরঃ কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত চারটি কাব্যগ্রন্থ হল — ঝরা পালক, ধূসর পাণ্ডুলিপি , মহাপৃথিবী , সাতটি তারার তিমির । 

( খ ) কবির কাব্যগুলোতে বিশেষত কী কী ভাবের আকর্ষণ বেশি দেখা যায় ? 

উত্তরঃ জীবনানন্দের কাব্যে কবি – কথিত নির্জনতাবোধ , প্রকৃতিচেতনা, ইতিহাসচেতনা , সমাজচেতনা , নিশ্চেতনা , অবচেতনা ভাবের আকর্ষণ বেশি দেখা যায় । এছাড়াও রোমান্টিকতা ও মৃত্যুচেতনা আকর্ষণ দেখা যায় । 

( গ ) কবির জন্মভূমি বাংলার বিষয়ে লেখো । 

উত্তরঃ রূপসী বাঙলায় মৃত্যুর পরেও ফিরে আসার কল্পনায় কবি তাঁর প্রিয় স্নিগ্ধ , শ্যামল গ্রাম – বাঙলার প্রকৃতির রূপচিত্র এঁকেছেন ‘ আবার আসিব ফিরে কবিতায় । ধানসিড়ি , রূপসা , জলঙ্গী আরও কত সুন্দর নামের নদীর তীরে বাংলার গ্রাম । গ্রামের আকাশে , গাছে গাছে ওড়ে শঙ্খচিল , শালিখ , ভোর হয় কাকের রবে । কার্তিকে সেখানে পালিত হয় নবান্ন উৎসব। ভোরবেলায় ঢাকা থাকে ঘন কুয়াশায় , দুপুরে কাঁঠাল ছায়ার স্নিগ্ধতা আশ্রয় দেয় । কিশোরীরা আদরের পোষা হাঁসের পায়ে পরিয়ে দেয় ঘুঙুর , সে হাঁস ভেসে চলে কল্মীর গন্ধে ভরা পুকুরে , সারাদিন । শোনা যায় শিমূলের ডাল থেকে হঠাৎ লক্ষ্মীপেঁচার ডাক , বাড়ির উঠোনে গনো শিশু আপনমনে খইয়ের ধান ছড়াতে হয়তো ব্যস্ত , কোনো কিশোরকে দেখা যায় ছেঁড়া , সাদা পাল তুলে দিয়ে রূপসা নদীর ঘোলা জলে ডিঙা বেয়ে চলেছে । গোধূলির রক্তিম আকাশে বকের দল মেঘের মধ্যে সাঁতার কেটে ফিরে চলে নীড়ের দিকে । 

Abar Asibo Phire Poem Summary in Bengali

( ঘ ) কবি পুনঃ জন্মে বিশ্বাস করেন কী ? এ বিষয়ে যা জান বর্ণনা করো । 

উত্তরঃ কবি পুনঃজন্মে বিশ্বাস করেন । আলোচ্য কবিতাটির মধ্যে পরোক্ষভাবে কিছুটা মৃত্যুচেতনার অস্পষ্ট ছায়াপাত থাকলেও এতে বলিষ্ঠ জীবনবাদই বেশি স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ । এই জীবন থেকে বিদায় নিলে তবেই পুনর্জন্ম অর্থাৎ আবার ফিরে আসা সম্ভব । কবি গ্রামবাংলা ও তার প্রকৃতিকে ভালোবাসেন । সেজন্য পরজন্মে সেখানেই জন্মগ্রহণ করার ইচ্ছা রয়েছে । 

( ঙ ) কবি হাঁস হয়ে পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে চান কেন ? 

উত্তরঃ কবি বাংলার সজল শ্যামল প্রকৃতি ও সেই প্রকৃতির বুকে সযত্নে লালিত মানুষ ও পশুপাখিদের গভীরভাবে ভালোবাসেন । এই সকলই কবির প্রিয় । এদের দেখে দেখে তাঁর আশ মেটে না । বারে বারে এই প্রকৃতির মাঝে ফিরে আসতে চান । কলমীর গন্ধভরা পুকুরের জলে ভাসমান হাঁস হয়েও আসতে পারেন । 

( চ ) নবান্ন উৎসব কী ? এ বিষয়ে কী জান লেখো। 

উত্তরঃ পূর্ববঙ্গের ( বর্তমান বাংলাদেশ ) গ্রামের মানুষদের পালন করা এক প্রকার উৎসব । হেমন্তকালে বাংলায় কৃষকরা শালিধান কাটার পর বাঙালীদের মধ্যে প্রচলিত নতুন ধানের নতুন চালের অন্নগ্রহণ করা উপলক্ষে আয়োজিত এক প্রকার বিশেষ উৎসব হল নবান্ন উৎসব । 

( ছ ) “ আমাকেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে ” —কথাটির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও । 

উত্তরঃ কবি গ্রাম – বাংলার মুক্ত প্রকৃতির কোলে মানুষ ও মনুষ্যেতর বিচিত্র প্রাণীদের ভিড়ের মধ্যে ফিরে আসতে চান । নির্জনতার কবি জীবনানন্দ অবশ্য ভিড় পছন্দ করেন না । তবে এই ভিড় নগরজীবনের ভিড় নয় , এতে কৃত্রিম যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল নেই , বরং আছে বৈচিত্র্যের মেলা । সেজন্য খোলামেলা প্রকৃতির কোলে এই বৈচিত্র্যের ভিড় কবির অপছন্দ নয় । 

৪। শূন্যস্থান পূরণ করো— 

( ক ) রূপসার ________ জলে হয়তো ________ এক সাদা ছেড়া পালে ________বায় । 

উত্তরঃ রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে ডিঙা বায় ।

( খ ) শুনিবে এক ________ ডাকিতেছে ________ ডালে হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে। 

উত্তরঃ শুনিবে এক লক্ষ্মীপেঁচা ডাকিতেছে শিমূলের ডালে হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে । 

( গ ) আবার আসিব আমি ________ নদী মাঠ খেত ________ , ________ ঢেডয়ে ভেজা বাংলার এ ________ করুণ ________ ।

উত্তরঃ আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ খেত ভালোবেসে , জলঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙ্গায় । 

৫। রচনাধর্মী উত্তর লেখো : 

( ক ) “ এই কার্তিকের নবান্নের দেশে ” –এর অন্তর্নিহিত ভাব প্রকাশ করো । 

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু কবি জীবনানন্দ দাশের ‘ আবার আসিব ফিরে’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে । 

গ্রাম – বাংলার প্রতি কবির এমন নিবিড় অনুরাগ যে পরজন্মে তিনি এই বাংলার নিসর্গ প্রকৃতির বিচিত্র সমারোহ এবং মানুষের মধ্যে পুনরায় যে ফিরে আসবেন , সেই গভীর প্রত্যয় ও বিশ্বাসের কথাই ব্যক্ত হয়েছে । 

কার্তিকের নবান্নের দেশ বলতে বিশেষভাবে বাংলাদেশ বা গ্রাম – বাংলার কথাই বোঝায় । কবি এই গ্রাম – বাংলাকে গভীরভাবে ভালোবাসায় মৃত্যুর পরে পুনরায় এর বুকেই ফিরে আসতে আগ্রহী । ‘ নবান্ন ‘ গ্রাম বাংলার নতুন অন্নগ্রহণের উৎসব । এই উৎসব হয় অগ্রহায়ণ মাসে — যখন মাঠ থেকে নতুন ধান ঘরে আসে । কিন্তু কবি “ কার্তিকের নবান্নের দেশে ” বলেছেন। সেজন্য মনে হয় এতে অগ্রহায়ণ মাসের নবান্ন উৎসবের কথা হয়তো কবি বলেননি । নবান্ন বলতে নব – অন্ন অর্থাৎ নূতন ফসলের কথাই হয়তো কবি বুঝিয়ে থাকবেন । ধান বা অন্নই বাংলার প্রধান ফসল । কার্তিক মাসে এই প্রধান ফসলে মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে থাকে । ধান পাকার সময় হয়ে আসে । সারা বছরের নতুন অন্নের সমৃদ্ধ ভাণ্ডারে পূর্ণ এই কার্তিক মাসের কথাই বোধ হয় কবি বিশেষভাবে স্মরণ করিয়েছেন । বাংলা সেই কার্তিকের নূতন অন্নের দেশ — সেই দেশেই কবি পরজন্মে পুনরায় ফিরে আসার ইচ্ছা ও গভীর বিশ্বাস ব্যক্ত করেছেন।

( খ ) “ আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে ” —কবি পুনরায় জন্মগ্রহণ করে কাদের ভিড়ে ফিরে আসতে চান বর্ণনা করো । 

উত্তরঃ “ আবার আসিব ফিরে ” কবিতায় কবির স্বদেশ ও প্রকৃতি – প্রীতি, গ্রাম বাংলার নিসর্গ প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি গভীর আকর্ষণ ও নিবিড় ভালোবাসা ফুটে উঠেছে । 

কবি জীবনানন্দ দাশ গ্রাম – বাংলার মুক্ত প্রকৃতির কোলে মানুষ ও মনুষ্যেতর বিচিত্র প্রাণীদের ভিড়ের মধ্যে ফিরে আসতে আগ্রহী । নির্জনতার কবি জীবনানন্দ ছদ করেন অবশ্য ভিড় পছন্দ করেন না । তবে এই ভিড় নগরজীবনের ভিড় নয় , এতে কৃত্রিম যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল কালাহল নেই , বরং আছে বৈচিত্র্যের মেলা । সেজন্য সজন্য খোলামেলা প্রকৃতির কোলে এই বৈচিত্র্যের ভিড় কবির অপছন্দ নয় । 

বাংলার নদী – মাঠ – ক্ষেত ভালোবাসেন বলে কবি ধানসিঁড়ির তীরে এই আসবেন । মানুষ বা অন্য কোনো পাখির রূপেও তিনি করতে পারেন । শঙ্খচিল , শালিখ রূপেও তিনি নবজন্ম গ্রহণ করতে পারেন । শঙ্খচিল , শালিখ , আবার ভোরের কাক , কাঁঠাল ছায়ায় হেমন্তের ভাসমান কুয়াশা , কলমীর গন্ধে ভরা পুকুরের জলে সারাদিন সাঁতার কাটা হাঁস , সন্ধ্যার বাতাসে ওড়া সুদর্শন , শিমূল গাছের ডালে বসে ডাকে যে লক্ষ্মীপেঁচা , উঠোনে খইয়ের ধান ছড়ায় যে মানবশিশু , নদীর ঘোলা জলে সাদা ছেঁড়া পাল তুলে ডিঙা বায় যে কিশোর , অস্পষ্ট অন্ধকারে সূর্যাস্তের রঙে রঙিন মেঘ সাতার দিয়ে নীড়ে ফেরে যে বক — প্রকৃতির এই বিচিত্র প্রাণীর ভিড়ে অর্থাৎ সমারোহের মধ্যেই কবি ফিরে আসতে চান । 

( গ ) কবিতাটির সারাংশ সংক্ষেপে ব্যক্ত করো । 

উত্তরঃ নির্জনতার কবি জীবনানন্দ দাশ গ্রাম – বাংলার মমতাময়ী মৃত্তিকা , নদী , শস্যক্ষেত্র , শ্যামলিমায় ভরা প্রান্তর , মানুষ ও বিচিত্র মুখর প্রাণীদের এত নিবিড়ভাবে ভালোবেসেছেন যে , এ জীবনের পরিসমাপ্তির পরেও পুনরায় তিনি বাংলাদেশের বুকেই নবজন্ম গ্রহণ করবেন । আগামী জন্মে তার মধ্যে বর্তমানের রূপ খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় সত্য কিন্তু বাংলার প্রতি কবির এমন মমত্ববোধ জন্মেছে যে মানবদেহে না হলেও পশুপাখি পতঙ্গ রূপেও তিনি এদেশের মাটিতে ফিরে আসবেন । মানুষের বিচিত্র সমারোহের মধ্যেই কোন – না – কোন রূপে তিনি থাকবেনই । বাংলার প্রতি কবি যে গভীর আকর্ষণ অনুভব করেছেন , তা কাটিয়ে পুনর্জন্ম রহিত মোক্ষলাভ তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় । সেজন্য এই স্নিগ্ধ ছায়ায় বিভিন্নরূপে তিনি নবজন্ম পরিগ্রহ করবেন । 

কবি পুনরায় বাংলার শ্যামল ছায়ায় ফিরে আসবেন । তখন হয়তো মানুষ না হয়ে শঙ্খচিল , শালিখ বা ভোরের কাক হয়ে কাঁঠাল গাছের নিবিড় ছায়ায় ঘেরা গৃহের আঙিনায় হেমন্তের কুয়াশায় ভেসে আসবেন । নয়তো বা কলমীর গন্ধে ভরা বিলের জলে ভাসমান হাঁস হয়েও আসতে পারেন । শস্যশ্যামলা বাংলার নদী , মাঠ – খেতের প্রতি গভীর মমত্ববোধই তাকে ফিরে আসবার জন্য ব্যাকুল করেছে । 

আকাশে উড়ন্ত ঘুড়ি বা পাখি , শিমূলের ডালে বসা লক্ষ্মীপেঁচা , উঠোনের ঘাসে খই ছড়িয়ে ফেলে যে শিশু , বর্ষার ঘোলা জলে সাদা পাল তোলা ডিঙাবাহক কিশোর , আসন্ন সন্ধ্যার রঙে রাঙান মেঘের মধ্য দিয়ে নীড়ে ফেরা সাদা বকের দল — প্রকৃতির এই বিচিত্র সমারোহের মধ্যেই কবিকে খুঁজে পাওয়া যাবে । 

( ঘ ) “ আবার আসিব ফিরে ” —কবিতা নামকরণের সার্থকতা বিচার করো । 

উত্তরঃ “ আবার আসিব ফিরে ” কবিতাটি কবি জীবনানন্দ দাশের রচিত “ রূপসী বাংলা ” নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া । কবিতাটি “ রূপসী বাংলার ” পঞ্চাশতম কবিতা । এই কাব্যগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতায় গ্রাম – বাংলার নিসর্গ প্রকৃতির পটভূমিকায় রচিত হয়েছে কবির ক্লান্ত বিষণ্ণ জীবনের অনুভূতি । কবির জীবিতকালে এই কবিতাগুলি প্রকাশিত হয়নি । কবির মৃত্যুর পর তাঁর ভাই অশোকানন্দ দাশ পাণ্ডুলিপি থেকে কবিতাগুলি “ রূপসী বাংলা ” নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন । বর্তমান যুগের কৃত্রিমতা , স্বার্থপরতা , এই মানব সমাজের প্রতি কবির বিতৃষ্ণা এসেছে — সেজন্য তিনি গ্রাম – বাংলার স্নিগ্ধ অমলিন সৌন্দর্যের মাঝে মানসিক আশ্রয় নিতে চেয়েছেন । 

নাগরিক জীবনে ক্লান্ত ও অবসাদক্লিষ্ট কবির সৌন্দর্যচেতনা আর প্রকৃতি – প্রেমের মাঝে পরম শান্তি খুঁজে পেয়েছেন । “ রূপসী বাংলা ” নামক কাব্যগ্রন্থে রচিত কবিতাগুলির কোনটিরই আলাদা নাম দেওয়া হয়নি । রবীন্দ্রনাথের নৈবেদ্য , বলাকা , প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘ প্রথমা ’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থে কবিতাগুলির স্বতন্ত্র শিরোনাম না থাকলেও এক , দুই প্রভৃতি সংখ্যার দ্বারা সেরূপ চিহ্নিত করা হয়েছে । জীবনানন্দের “ রূপসী বাংলায় ” সেরূপ সংখ্যার চিহ্ন নেই । “ রূপসী বাংলা ” অনেকগুলি কবিতার একত্রীভূত সামগ্রিক পরিচয় । এই কবিতায় বাংলার পল্লী – প্রকৃতির রূপের চিত্র থাকলেও তা সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত নয় — কবি কল্পনায় “ রূপসী বাংলার ” খণ্ডচিহ্ন মাত্র । যদিও চিত্রটি ব্যাপক ও অপরূপ । 

কবি বাংলার নিসর্গ প্রকৃতি ও বাংলার মানুষদের ভালোবেসেছেন । কবি তাদের প্রতি গভীর মমত্ববোধ , প্রগাঢ় স্নেহ ও জন্ম – জন্মান্তরের টান অনুভব করেছেন । তাই তিনি মৃত্যুর পরও পুনরায় এই বাংলার জল , হাওয়ায় ফিরে আসবেন সেজন্য প্রত্যয় ঘোষণাই এই কবিতার প্রধান উপজীব্য বিষয় । পরজন্মে যদি তিনি মনুষ্যরূপে জন্মগ্রহণ করতে নাও পারেন তবে মনুষ্যেতর প্রাণীরূপে এই বাংলার মাটিতে জন্মগ্রহণ করবেন। শঙ্খচিল , শালিখ বা অন্যরূপে তিনি এখানে আসবেন । 

তিনি অবশ্যই ফিরে আসবেন পল্লীবাংলার বিচিত্র পটভূমিকায় বিচরণশীল পাখি , শিশু , কিশোরের ভিড়ে । এই সুনিবিড় আশার সুরে কবিতাটি সমাপ্তিলাভ করেছে । বর্তমান কবিতাটির মতো যেসব কবিতায় একটি বাক্যাংশের মধ্যে সমগ্র কবিতাটির মূলভাব নিহিত থাকে এবং তা যদি ধ্রুবপদের ন্যায় ধ্বনিত হতে থাকে তবে সেই কবিতার এই ধরনের নামকরণ শুধু সঙ্গতই নয় , নিরাপদও বটে । সমগ্র কবিতাটির এটিই মূল বক্তব্য । কবিতাটির প্রতিটি ছত্রে কবি গ্রাম – বাংলায় ফিরে আসার মর্মস্পর্শী আবেগ প্রকাশ করেছেন— সেই দিক দিয়ে “ আবার আসিব ফিরে ” নামটি যুক্তিপূর্ণ ও সার্থক হয়েছে ।

৬। ব্যাখ্যা লেখো : 

( ক ) “ ভোরের কাক হয়ে এই নবান্নের দেশে ” । 

উত্তরঃ কবি গ্রাম – বাংলার রমণীয় প্রকৃতি , পশুপাখি ও মানুষকে সুনিবিড়ভাবে ভালোবাসেন । রূপ , রস , মাধুর্যে ভরা বাংলার প্রকৃতির বুকে বিচরণ করে কবির হৃদয় তৃপ্তিলাভ করেনি , কবির আশা চরিতার্থ হয় নি । সেজন্য এর প্রেমে বিভোর কবিচিত্ত একে ছেড়ে অন্য কোনো স্থানে যেতে চান না। কিন্তু পৃথিবীর নিয়ম অনুসারে এ জীবনের মায়া কাটিয়ে কবিকে একদিন পরপারে যাত্রা করতে হবে । জন্মান্তরে কবি গ্রাম – বাংলার প্রকৃতির বিচিত্র সমারোহের মধ্যেই ফিরে আসতে চান । মানবদেহে তা সম্ভব না হলেও পশুপাখি , পতঙ্গরূপেও এ দেশের সজল স্নিগ্ধ ছায়ায় ফিরে আসবেন । 

ইহজন্মের প্রতি আসক্তি থাকলে মৃত্যুর পর আত্মার মুক্তি হয় না , বাঙলার প্রতি কবির এত নিবিড় অনুরাগ জন্মেছে যে , তিনি জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটার পর , অর্থাৎ মৃত্যুর পরও এই পল্লী – বাংলার কোলেই ফিরে আসতে চান । ফলে , মোক্ষ , মুক্তি , অক্ষয় স্বর্গবাস কবির কাম্য নয় । কবির দৃঢ়বিশ্বাস ও আন্তরিক প্রত্যাশা যে তিনি মৃত্যুর পরেও এই বাংলার বিচিত্র প্রকৃতির বুকেই কোন – না কোন রূপে ফিরে আসবেন । 

গ্রাম – বাংলার নদী , শস্যক্ষেত্র , জলাশয় , গাছগাছালি , আকাশ , পাখি — রূপে , রসে , গন্ধে ও মাধুর্যে কবির নিকট একাত্ম হয়ে গেছে । বাংলার প্রেমে বিভোর কবিকে এদের ভীড়েই নানারূপে পাওয়া যাবে । বাংলার মমতাময়ী মৃত্তিকায় কবি ফিরে আসবেন । তখন মানবদেহে আসা যদি সম্ভব নাও হয় তবে শঙ্খচিল , শালিখ বা প্রত্যুষের কাক হয়ে , কাঁঠাল গাছের নিবিড় ছায়ায় ঘেরা গৃহের আঙিনায় হেমন্তের কুয়াশায় পাখি হয়ে উড়ে আসবেন অথবা হাঁস হয়ে কলমীর গন্ধভরা বিলের জলে ভেসে বেড়াবেন । নির্জনতার কবি বাংলার স্রোতস্বিনী নদী , শস্যশ্যামল ক্ষেত্র , সজল স্নিগ্ধ প্রান্তর ভালোবাসেন বলে আগামী জন্মে এদের মধ্যেই আবার ভিন্নরূপে ফিরে আসবেন । কার্তিকের নতুন ফসলের দেশে তিনি হৈমন্তী কুয়াশার সঙ্গে মিশে হলেও আত্মপ্রকাশ করবেন। গ্রাম – বাংলায় গোধূলির বাতাসে দূর আকাশে সুদর্শন পাখির দলকে উড়তে দেখা যায় , শিমূলের ডালে বসে থাকা লক্ষ্মীপেঁচার ডাক শোনা যায় , উঠানে শুকাতে দেওয়া খইয়ের ধান লীলাচঞ্চল শিশুকে মুঠা করে ঘাসের মধ্যে ছড়াতে দেখা যায় । 

বর্ষার ঘোলা জলের নদীতে সাদা ছেঁড়া পাল খাটিয়ে ডিঙ্গি বাইতে দেখা যায় কিশোরকে । আসন্ন সন্ধ্যার সূর্যাস্তের রঙে রক্তিমাভ মেঘের মধ্য দিয়ে নীড়ের সন্ধানে সাদা বকের সারিকে উড়ে আসতে দেখা যায় — এমন নিসর্গ প্রকৃতি , বিচিত্র প্রাণীর মুখরতায় কবিকে খুঁজে পাওয়া যাবে। গ্রাম – বাংলার মায়ায় মুগ্ধ কবি এর সাথে একাত্ম হয়ে থাকবেন । কবির সত্তার গভীরে নিহিত আছে প্রাণ । বাংলার সাথে অতি নিগূঢ় আত্মার সংযোগ — আছে চিরন্তন নাড়ীর টান । 

( খ ) “ বাংলার নদী মাঠ খেত ভালোবেসে । ” 

উত্তরঃ গ্রাম – বাংলার প্রতি কবির এমন নিবিড় অনুরাগ যে পরজন্মে তিনি এই বাংলার নিসর্গ প্রকৃতির বিচিত্র সমারোহে এবং মানুষের মধ্যে যে আবার ফিরে আসবেন , সেই গভীর প্রত্যয় ও বিশ্বাসের কথাই এখানে ব্যক্ত হয়েছে । 

নির্জনতার কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার পল্লী – প্রকৃতি ও তার পশুপাখি মানুষকে গভীরভাবে ভালোবেসেছেন । বাংলার নদী , শস্যক্ষেত্র , গাছগাছালি , পাখি , মানুষ এরা রূপ – রস – গন্ধ – স্পর্শ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে । সেজন্য তাদের দেখে কবির আশা মেটেনি । ঘুরে এদের মাঝেই এসে কবি মানসিক তৃপ্তিলাভ করেন । মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে কবিকে একদিন এই পার্থিব জগৎ সংসারের মায়া কাটাতে হবে । কিন্তু সেই মৃত্যুর পর , মোক্ষ , মুক্তি , অক্ষয় স্বর্গলাভ তাঁর কাম্য নয় । 

তিনি কেবলমাত্র জন্ম – জন্মান্তর ধরে শ্যামলিমায় ছাওয়া বাংলার বুকে , পশুপাখির বিচিত্র সমারোহের মাঝে মানুষের মধ্যে ফিরে আসতে চান । ইহজগতের প্রতি আসক্তি নিয়ে মৃত্যুবরণ করলে আত্মার মুক্তি হয় না । কবির এই বাংলার প্রতি আসক্তির অবসান ঘটেনি বলে তার পক্ষে পুনর্জন্মরহিত মোক্ষলাভ করা সম্ভব নয় । কবির দৃঢ় প্রত্যয় পরজন্মেও তিনি পুনরায় বাংলার বৈচিত্র্যময় সমারোহের মধ্যে ফিরে আসবেন। কবি এই পুনঃজন্মে মানুষরূপে না হয়ে শঙ্খচিল , শালিখ বা ভোরের কাক হয়েও জন্মগ্রহণ করতে পারেন । কার্তিক মাসে হৈমন্তি ফসলের কালে বাংলাদেশের পল্লীগ্রামে কাঁঠাল গাছের নিবিড় ছায়াবেষ্টিত গৃহে ভোরের কুয়াশার মতো হয়তো তিনি পাখির বেশে উড়ে আসবেন । এই বাংলার স্রোতস্বিনী নদী , শস্যশ্যামলা ধানক্ষেতের দেশে পাখির বেশে প্রকৃতির সঙ্গে খেলা করতে তাঁর খুব সাধ বা কামনা । সেজন্য সেদিন কবি এ জনমের খেলাঘর ভেঙে পরপারে যাত্রা করবেন । 

( গ ) ‘ আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে । 

উত্তরঃ উদ্ধৃত অংশটুকু কবি জীবনানন্দ দাশের সুপরিচিত কবিতা “ আবার আসিব ফিরে ” থেকে নেওয়া । ইহজন্মের পরিসমাপ্তির পরও বাংলার রমণীয় প্রকৃতির বিচিত্র সমারোহের মধ্যে , কবিকে ভিন্নরূপে খুঁজে পাওয়া যাবে , এই অংশে সেটা ব্যক্ত হয়েছে । 

কবি পল্লীগ্রামের রস মাধুর্যে ভরা প্রকৃতি ও তার কোলে সযত্নে লালিত সৌন্দর্যকে নান পশুপাখি ও মানুষকে নিবিড়ভাবে ভালোবেসেছেন । বাংলার এই কমনীয় নানা রূপে দেখেও কবির হৃদয়ের তৃপ্তি হয় নি । সেজন্য জীবনাবসানে তিনি আবার গ্রাম – বাংলার বুকেই ফিরে আসবেন। এ জীবনের পরিসমাপ্তিতে , বর্তমান রূপের মাঝে কবিকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় । হয়ত কবি মানুষরূপে না জন্মে , শঙ্খচিল , শালিখ বা ভোরের কাক হয়েও আসতে পারেন । কলমীর গন্ধভরা খাল , বিল , পুকুরের জলে ভাসমান হাঁস হয়েও তিনি জন্মগ্রহণ করতে পারেন । পল্লীবাংলার মাঠে , ছায়াঘেরা গৃহের আঙিনায় বা জলাশয়ে যে সকল ছবি বা প্রাণী দেখা যায় , কোন না কোন রূপে কবিকে এদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে। 

শিমূল গাছের শাখায় বসে যে লক্ষ্মীপেঁচা ডাকে , যে শিশু খইয়ের জন্য শুকাতে দেওয়া ধান উঠানের ঘাসের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় , যে কিশোর নদীর জলে ছেঁড়া পাল খাটিয়ে ডিঙি বায় , সন্ধ্যার আসন্ন অন্ধকারে সূর্যাস্তের রঙে রক্তিমাভ মেঘ সাঁতরে পূবের অন্ধকার আকাশের দিকে নীড়ের সন্ধানে উড়ে আসে যে সাদা বকের দল — এই বিচিত্র প্রাণী ও মানুষের ভীড়ের মধ্যেই আগামী জন্মে কবিকে খুঁজে পাওয়া যাবে । রূপসী বাংলার প্রতি কবির গভীর প্রেম জন্মেছে । এখানে গ্রামবাংলাকে কবি রূপবতী নারীর সাদৃশ্যে কল্পনা করেছেন । সেই রূপবতী পল্লীবাংলার প্রতি মুগ্ধ কবিচিত্ত এই বাংলার রমণীর প্রকৃতি , পাখি ও মানুষের সাথে একাত্ম হয়ে গেছেন — অতএব তাদের বিচিত্র সমারোহের মধ্যেই কবির , সন্ধান যথার্থ হবে ।

ব্যাকরণ : 

১। ( ক ) পদ পরিবর্তন করো : 

উত্তরঃ করুণ — কারুণ্য।

সন্ধ্যা — সান্ধ্য।

মানুষ — মনুষত্ব।

মাঠ — মেঠো।

নিজে করো — 

জল , শিশু , রাঙা , সাদা , কিশোর , নাশ , অন্তর , সময় , সম । 

উত্তরঃ জল — জলীয়।

শিশু — শৈশব।

শাদা — শুভ্র।

কিশোর – কৈশোর।

নাশ — নাশকতা।

অন্তর— আন্তরিক।

সময়— সাময়িক।

( খ ) সরল , যৌগিক ও জটিল বাক্য কাকে বলে ? উদাহরণসহ বুঝিয়ে লেখো । 

উত্তরঃ সরল বাক্য — যে সকল বাক্য একটিমাত্র উদ্দেশ্য ও একটি বিধেয় নিয়ে গঠিত হয় তাঁদের বলা হয় সরল বাক্য । যেমন — আমি ভাত খেয়েছি । বাবা দিল্লি গিয়েছেন । মিথ্যাবাদী রামকে সকলে ঘৃণা করে । 

জটিল বাক্য — যে বাক্যে পরস্পরের উপর একাধিক নির্ভরশীল উপাদান বাক্য থাকে তাকে জটিল বাক্য বলে । যেমন —

১ । আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি যে তুমি এমন একটি আকাট মিথ্যে কথা বলবে । 

২। যদিও লোকটি যথেষ্ট বিদ্বান তবুও সে ভীরু । 

৩। যে ব্যক্তি পরের উপকার করে সে কখনও প্রতিদান আশা করে না । 

যৌগিক বাক্য — একাধিক সরলবাক্য যখন অব্যয় পদ দ্বারা যুক্ত হয়ে একটি পূর্ণ বাক্য গঠন করে তখন তাকে যৌগিক বাক্য বলে । যেমন— 

১। বিধান এখানে এসেছিল কিন্তু আমি তাকে দেখিনি । 

২। সে কোনো দোষ করেনি তবু তার শাস্তি হল । 

৩। অভয় যখন পেয়েছি অতএব সত্য কথাটাই বলব । 

নিজে করো –

সরল , জটিল এবং যৌগিক বাক্যের আরও তিনটি করে , নিজে বাক্য তৈরি করো।

উদাহরণ : সরল বাক্য – 

( ১ ) ধনীরা প্রায়ই অহংকারী হয় । 

( ২ ) কাল বৃষ্টির জন্য স্কুলে যেতে পারিনি । 

( ৩ ) রবীন্দ্রনাথকে আমরা কবিগুরু বলি । 

জটিল বাক্য – 

( ১ ) সে অফিসে আমি যাইব । 

( ২ ) কাগজ কলম নিয়ে লিখতে বসো । 

( ৩ ) তোমরা কোথায় থাক , আমি জানি । 

যৌগিকবাক্য— 

( ১ ) আকাশে মেঘ নেই অথচ জল পড়ল । 

( ২ ) খাইতে দাও নহিলে চুরি করিব । 

( ৩ ) আমরা কেঁদে মরি , আর যাদের জন্যে কাঁদি , তারা কিন্তু কাঁদে না । 

( গ ) এক কথায় প্রকাশ করো ( বাক্য সংকোচন )। 

যা জানার যোগ্য বা জানতে হবে — জ্ঞাতব্য । 

যা কখনও ভাবা যায় না — অভাবনীয় । 

পতি পুত্রহীনা নারী — অবীরা । 

যিনি কম কথা বলেন — মিতভাষী , স্বল্পবাক । 

পক্ষীর কলরব — কূজন । 

ময়ূরের ডাক — কেকা । 

নিজে করো : 

একই মায়ের পুত্র , মানুষের হাড় , যিনি দ্বার পরিগ্রহ করেন নাই, ভোজন করবার ইচ্ছা , যে নারীর সম্প্রতি বিবাহ হয়েছে , যাহার দু’হাত সমান চলে , বিচলিত মন যার , যে বস্তু পেতে ইচ্ছা করা যায় , রাত্রিকালীন যুদ্ধ , রক্তবর্ণ পদ্ম , কুমারীর পুত্র , বিষ্ণুর গদা , ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শঙ্খ , হস্তীর শাবক , হাতি বাঁধার স্থান । 

উত্তরঃ একই মায়ের পুত্র — সহোদর । 

মানুষের হাড় — অস্থি । 

যিনি দ্বার পরিগ্রহ করেন নাই — কুমার । 

ভোজন করবার ইচ্ছা — বুভুক্ষা ।

যে নারীর সম্প্রতি বিবাহ হয়েছে — নববধূ । 

যাহার দু’হাত সমান চলে — সব্যসাচী । 

বিচলিত মন যার — অস্থির ।

যে বস্তু পেতে ইচ্ছা করা যায় — লিপ্সা । 

রাত্রিকালীন যুদ্ধ — সৌপ্তিক । 

রক্তবর্ণপদ্ম — কোকনদ , কমল । 

কুমারীর পুত্র — কানীন । 

বিষ্ণুর গদা — কৌমোদকী । 

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শঙ্খ — পাঞ্চজন্য । 

হস্তীর শাবক — হস্তীশাবক । 

হাতি বাঁধার স্থান — বারী । 

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ 

১। ( কবিতা থেকে শব্দ নিয়ে শূন্যস্থান পূরণ কর ) 

( ক ) আবার _________ নদীর তীরে ফিরে আসব । 

উত্তরঃ ধানসিড়ি।

( খ ) হেমন্তের _________ দেশে । 

উত্তরঃ নবান্নের।

( গ ) লক্ষ্মীপেঁচা _________ ডালে বসে ডাকছে । 

উত্তরঃ শিমূলের।

২। ( সঠিক উত্তরে ✔ চিহ্ন দাও ) । 

( ক ) কোন নদীর ঘোলা জলে কিশোর ডিঙা বায় ? —রূপসার / জলঙ্গীর ।

উত্তরঃ রূপসার 

( খ ) রাঙা মেঘ সাঁতরিয়ে কে আসছে ? সুদর্শন / বক ।

উত্তরঃ বক 

( গ ) সন্ধ্যার বাতাসে কী উড়ছে ? — শকুন / বিষ্ণুর চক্র।

উত্তরঃ শকুন 

৩। অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

( ক ) আবার আসিব ফিরে কবিতায় কবি কোথায় ফিরে আসতে চেয়েছেন ? 

উত্তরঃ কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর জন্মভূমি বাঙলাদেশেই ফিরে আসতে চেয়েছেন ।

( খ ) কবিতায় কোন্ উৎসবের কথা বলা হয়েছে ? 

উত্তরঃ কবিতায় বাঙলাদেশের নতুন ফসল তোলার উৎসব — নবান্নের কথ বলা হয়েছে । 

( গ ) জলঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা ডাঙাটি কী রকম ? 

উত্তরঃ জলঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা ডাঙাটি ফসলে ভরা বলে সবুজ আর প্রাকৃতিক দুর্ঘটনায় বিপর্যন্ত বলে করুণ । 

( ঘ ) কবিতায় উল্লিখিত পাখিদের নাম লেখ । 

উত্তরঃ ‘ আবার আসিব ফিরে ‘ কবিতাটিতে বাঙলার অতি পরিচিত কয়েকটি পাখি — কাক , শালিক , শঙ্খচিল , সুদর্শন , লক্ষ্মীপেঁচা ও বকের নাম উল্লেখ হয়েছে । 

৪। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

( ক ) কবি কাক হয়ে কখন কীভাবে ফিরে আসবেন ?

উত্তরঃ কবি পরবর্তী জন্মে কাক হয়ে ভোরবেলায় বাঙলার প্রকৃতিতে ফিরে আসবেন । কুয়াশায় জড়িয়ে থাকা প্রকৃতির কাঁঠাল ছায়ায় কুয়াশায় ভেসেই তিনি ফিরে আসবেন । 

( খ ) কবি কার হাঁস হয়ে ফিরে আসবেন ? তখন তিনি কী করবেন ? 

উত্তরঃ কবি কোনো কিশোরীর আদরের হাঁস হয়ে ফিরে আসবেন । কিশোরীটি হয়তো তার পোষা হাঁসের লাল পায়ে ঘুঙুর বেঁধে দেবে । কল্মী লতার গন্ধে ভরা খাল – বিল – জলাশয়ে ভেসে ভেসে তার দিন কেটে যাবে । 

( গ ) ‘ কিশোর এক ’ কোথায় কী করছে ? 

উত্তরঃ বাঙলার গ্রামের অসংখ্য কিশোরের মতন কবিতায় উল্লিখিত কিশোরটি হয়তো রূপসা নদীর ঘোলা জলে ছেঁড়া সাদা পাল তুলে দিয়ে একা একা ডিঙা বেয়ে চলেছে । 

৫। রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

( ক ) ‘ আবার আসিব ফিরে ‘ — কার লেখা কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ? ‘ আবার আসিব ফিরে ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? কবি কোথায় কীভাবে ফিরে আসতে চেয়েছেন ? এই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের মধ্যে কবির কী মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে ? 

উত্তরঃ কবি জীবনানন্দ দাশ – এর লেখা ‘ রূপসী বাংলা ‘ কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতা ‘ আবার আসিব ফিরে ‘ শিরোনামে সংকলিত হয়েছে । 

মৃত্যুতে জীবনের পূর্ণচ্ছেদ রচিত হয় । মৃত্যুর পর মানুষ কোথায় যায় তা কেউ জানে না । কিন্তু কবি তাঁর জীবনের সমাপ্তির পর পরবর্তী জন্মেও এখানে , এই বাঙলায় ফিরে আসতে তীব্রভাবে ইচ্ছা করেন । তাই তিনি বলেছেন ‘ আবার আসিব ফিরে ‘ । 

কবি তাঁর প্রিয় জন্মভূমিতে আবার মানুষ হয়ে নাও ফিরতে পারেন । তিনি হয়তো শঙ্খচিল বা শালিখের বেশে অথবা কার্তিক মাসে নবান্নের সময় ভোরের কুয়াশায় ভেসে কাক হয়ে কাঁঠাল ছায়ায় ঘেরা এই দেশে আসবেন । হয়তো কোনো কিশোরীর পোষা হাঁস হবেন তিনি , পায়ে বাঁধা থাকবে ঘুঙুর । সন্ধ্যার আকাশে উড়ন্ত সুদর্শন পাখি বা নীড়ে ফেরা সাদা বক , শিমূলের ডাল থেকে উঠোনে খইয়ের দান এই ডেকে ওঠা লক্ষ্মীপেঁচা— এরকম কোনো একটি রূপেও তিনি আসতে পারেন । দান ছড়াচ্ছে কোনো শিশু , কোনো কিশোর একা একা ডিঙা বয়ে চলেছে – এর কোনো রূপেও কবিকে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে । যে রূপেই হোক জলঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা এই সবুজ করুণ কূলে না এসে তিনি থাকতে পারবেন না । 

ফিরে আসার এই তীব্র বাসনা প্রকাশের মাধ্যমে বোঝা যায় কবির বাঙলাদেশের প্রতি সুগভীর , নিখাদ ভালোবাসা । এর সঙ্গে কবির জন্মান্তরবাদের বিশ্বাসও লক্ষিত হয়েছে 

ব্যাকরণগত : 

১। পদ – পরিচয় : 

ঘুঙুর — বিশেষ্য।

করুণ — বিশেষণ।

ঘোলা — বিশেষণ।

ছেঁড়া — বিশেষণ।

আমারেই — সর্বনাম।

অন্ধকারে — বিশেষ্য।

২। পদান্তর :

মানুষ ( বি . ) — মানুষী ( বিণ . ) ; বেশ ( বি . ) – বেশী ( বিণ . ) ; কুয়াশা ( বি . ) কুয়াশাছন্ন ( বিণ . ) ; কিশোরী ( বিণ . ) — কৈশোর ( বি . ) ; লাল ( বিণ . ) — লালিমা ( বি . ) ; গন্ধ ( বি . ) — গন্ধী ( বিণ . ) ; মাঠ ( বি . ) — মেঠো ( বিণ . ) ; করুণ ( বিণ . ) — কারুণ্য ( বি . ) ; সন্ধ্যা ( বি . ) – সান্ধ্য ( বিণ . ) বাতাস— বাতাসী ( বিণ , ) ; শিশু ( বিণ . ) — শৈশব ( বি . ) ; রাঙা ( বিণ . ) – রঙ ( বি . ) ; মেঘ ( বি . ) — মেঘলা ( বিণ . ) ; ধবল ( বিণ . ) — ধবলতা ( বি . ) । 

৩। কারক ও বিভক্তি :

ধানসিড়িটির তীরে ( অধিকরণে ‘ এ ’ বিভক্তি), এই বাংলায ( অধিকরণ কারকে ‘ য় ’ বিভক্তি ) । 

হয়তো মানুষ ( কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি ) নয় …। 

হয়তো হাঁস ( কর্মে শূন্য ) হব – কিশোরীর ঘুঙর ( কর্মে শূন্য ) রহিবে লাল পায় ( অধিকরণে ‘ য় ’ বিভক্তি ) । 

খইয়ের ধান ( কর্মকারকে শূন্যবিভক্তি ) ছড়াতেছে শিশু ( কর্তায় শূন্য বিভক্তি ) এক উঠানের ঘাসে ( অধিকরণে ‘ এ ’ বিভক্তি ) । 

লক্ষ্মীপেঁচা ( কর্তায় শূন্য বিভক্তি ) ডাকিতেছে শিমূলের ডালে ( অধিকরণে ‘ এ ’ বিভক্তি ) । 

হয়তো কিশোর ( কর্তায় শূন্য বিভক্তি ) এক … ডিঙা ( কর্মে শূন্য বিভক্তি ) বায় । 

আমারেই ( কর্মকারকে ‘ রে ’ বিভক্তি ) পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে ( অধিকরণ কারকে ‘ এ ’ বিভক্তি )। 

জলঙ্গীর ঢেউয়ে ( করণে ‘ য়ে ’ বিভক্তি ) ভেজা ….।