Q: যৌগিক স্বর কাকে বলে?
Ans: পাশাপাশি দুটো স্বরধ্বনি এক প্রয়াসে ও দ্রুত উচ্চারিত হয়ে যদি একটি যুক্তধ্বনিতে রূপ নেয়, তাকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে। অর্থাৎ একসঙ্গে উচ্চারিত দুটো মিলিত স্বরধ্বনিকে যৌগিক স্বর বা দ্বিস্বর ধ্বনি বলা হয়।
যেমন : অ + ই = ঐ; অ + উ = ঔ
Table of Contents
অথবা আমরা বলতে পারি যে ধ্বনিগুলোকে বিশ্লেষণ করা যায় তাদেরকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে।
যখন ভিন্ন দুটি বা তার অধিক স্বরধ্বনি একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়ে একটি যুক্ত স্বরধ্বনির সৃষ্টি করে, তখন তাকে বলা হয় যৌগিক স্বরধ্বনি বা সন্ধ্যক্ষর। যৌগিক স্বরধ্বনিকে আর দ্বিস্বর বা সন্ধিস্বর বা যৌগিক স্বর নামে অভিহিত করা হয়।
Q: যৌগিক স্বরধ্বনি কয়টি ও কী কী ?
Ans: দ্বি-স্বরে দুটি স্বর থাকে একটি পূর্ণ, আর একটি অপূর্ণ। বাংলায় পরের স্বরটিই সাধারণত অর্ধ হয়। বাংলা ভাষায় ২৫টি যৌগিক স্বরধ্বনি রয়েছে। বাংলা বর্ণমালায় যৌগিক স্বরজ্ঞাপক দুটো বর্ণ রয়েছে। ঐ এবং ঔ। উদাহরণ : কৈ, বৌ। অন্য যৌগিক স্বরের চিহ্ন স্বরূপ কোনো বর্ণ নেই।
যেমন – ঐ (অ + ই বা ও + ই), ঔ (অ + উ বা ও + উ)
ভাষাবিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এই ধরনের আরও অনেক যৌগিক স্বরধ্বনির সন্ধান দিয়েছেন:
যেমন:
দুই স্বরের সাহায্যে যৌগিক স্বরধ্বনি –
অও (কও = ক্+অও); আও (বাঁচাও = বাঁচ্ + আও); আই (পাই = প্ + আই); অ্যাও (ম্যাও = ম্ + অ্যাও); এই (নই = ন + এই ); এউ (কেউ = ক + এউ); এও (বলেও = বল + এও); ওউ (বউ = ব্ + ওউ) প্রভৃতি।
তিনটি স্বরধ্বনির সাহায্যে যৌগিক স্বরধ্বনি –
অওআ (লওয়া = ল্ + অওআ); ইএও (গিয়েও = গ্ + ইএও); আইআ (লাফাইয়া = লাফ্ + আইআ)।
চারটি স্বরধ্বনির সাহায্যে যৌগিক স্বরধ্বনি –
আইআও (বানাইয়াও = বান্ + আইআও)।
পাঁচটি স্বরধ্বনির সমবায়ে যৌগিক স্বরধ্বনি –
আওআইআ (খাওয়াইয়া = খ + আওআইআ)।
ছয়টি স্বরধ্বনির সমবায়ে যৌগিক স্বরধ্বনি –
আওআইআও (খাওয়াইয়াও = খ + আওআইআও)।
কিন্তু উপরে বর্ণিত সকল যৌগিক স্বরধ্বনির জন্য পৃথক কোনো যৌগিক স্বরবর্ণ নেই। কেবলমাত্র দুটি যৌগিক স্বরধ্বনির জন্য দুটি যৌগিক স্বরবর্ণ (লিখিত রূপ) আছে। সেই দুটি যৌগিক স্বরবর্ণ হল ঐ এবং ঔ। ঐগুলিকে সন্ধ্যক্ষর বা দ্বি-স্বর ও বলা হয়।
Q: যৌগিক স্বরধ্বনি ২৫ টি কি কি?
Ans: বাংলা ভাষায়, যৌগিক স্বরধ্বনি হল দুটি স্বরের যৌগিক মিল। এই মিলটি সাধারণত শব্দের গঠনে ব্যবহৃত হয়। বাংলা ভাষায় ২৫টি যৌগিক স্বরধ্বনি রয়েছে, যা হল:
- অ + ই = ঔ (/au/)
- অ + উ = ও (/o/)
- আ + ই = ঐ (/oi/)
- আ + উ = ঔ (/ou/)
- ই + ই = ঈ (/i/)
- ই + উ = ঊ (/u/)
- উ + ই = উই (/ui/)
- ঋ + ই = ঋই (/ri/)
- ঋ + উ = ঋউ (/ru/)
- এ + ই = ঐ (/oi/)
- এ + উ = ঐ (/oi/)
- ও + ই = ঐ (/oi/)
- ও + উ = ঐ (/oi/)
- ঔ + ই = ঐ (/oi/)
- ঔ + উ = ঐ (/oi/)
- অ + ঋ = ঐ (/oi/)
- আ + ঋ = ঐ (/oi/)
- এ + ঋ = ঐ (/oi/)
- ও + ঋ = ঐ (/oi/)
- ঔ + ঋ = ঐ (/oi/)
- ঐ + ই = ঐ (/oi/)
- ঐ + উ = ঐ (/oi/)
- ঐ + ঋ = ঐ (/oi/)
- ঔ + ঐ = ঔ (/ou/)
- ঐ + ঐ = ঐ (/oi/)
এই যৌগিক স্বরধ্বনিগুলি বিভিন্ন শব্দের গঠনে ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ আইন (অ + ই), আম (অ + আ), ওল (অ + উ), আউট (অ + উ), ভাই (ব + আ), তোল (ত + উ), নয়ন (ন + ই), তৈরি (ত + ঐ), কাল (ক + আ), মই (ম + আ), সৌন্দর্য (স + ঔ), লোক (ল + ও), হাওয়া (হ + আ), দৌড় (দ + ঔ), ঐতিহ্য (ঐ + ই), পৌঁছানো (প + ঔ), তৈরি (ত + ঐ), লৈম (ল + ঐ), বাউল (ব + ঐ), মাল (ম + আ), তখন (ত + ও), ভাই (ভ + আ), মই (ম + অ), পড় (প + অ), আজ (অ + আ), আইন (অ + ই), গল্প (গ + অ), হাঁট (হ + অ), মাঁ (ম + অ), নাম (ন + আ)।
মৌলিক ও যৌগিক স্বরধ্বনির পার্থক্য :
মৌলিক এবং যৌগিক স্বরধ্বনির মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলি নিম্নৰূপ:
মৌলিক স্বরধ্বনি | যৌগিক স্বরধ্বনি |
১. মৌলিক স্বরধ্বনি হল একটি শুদ্ধ নির্দিষ্ট আবৃত্তির স্বরধ্বনি। এর আবৃত্তি সংখ্যা নির্দিষ্ট এবং স্থির। | যৌগিক স্বরধ্বনিতে একাধিক মৌলিক স্বরধ্বনির সমষ্টি থাকে। যৌগিক স্বরধ্বনির আবৃত্তি সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়, পরিবর্তনশীল। |
২. মৌলিক স্বরধ্বনির তরঙ্গরূপ সরল। | যৌগিক স্বরধ্বনির তরঙ্গরূপ অসরল। |
৩. মৌলিক স্বরধ্বনি শুনলে মনে হয় একই ধরনের স্বর। | যৌগিক স্বরধ্বনি শুনলে বিভিন্ন ধরনের স্বর মনে হয়। |
এভাবে মৌলিক স্বরধ্বনি হলো শুদ্ধ একক আবৃত্তির স্বরধ্বনি যেখানে যৌগিক স্বরধ্বনিতে একাধিক মৌলিক স্বরধ্বনির মিশ্রণ থাকে।